স্কুল প্রতিষ্ঠাতা ডঃ উইলিয়াম কেরীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
১৭৬১ খ্রীষ্টাব্দে ১৭ই আগস্ট ইংল্যান্ডের নর্দাপটন শায়ারের টাওসেস্টার থেকে ৩ মাইল দূরে পর্লাসপিউরি নামক গ্রামের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন ছোট শিশু উইলিয়াম।তাঁর পিতার নাম ছিল এডমন্ড কেরী এবং মাতার নাম ছিল এলিজাবেথ কেরী । তিনি ছিলেন পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান। তাঁর পিতা এডমন্ড কেরী প্রথম জীবনে ছিলেন একজন তাঁতী। পরে তিনি তাঁতের কাজ ত্যাগ করে উত্তরসুরি হিসাবে প্যারিশক্লার্ক এবং স্কুল শিক্ষক হন। এডমন্ড কেরী চেয়েছিলেন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র উইলিয়াম কেরী যেন সন্মান ও গ্রহণ যোগ্যতা নিয়ে বড় হতে পারে। পিতার দেখা স্বপ্ন ডঃ উইলিয়াম কেরী বৃথা যেতে দেননি।
বাল্যকাল থেকে কেরীর জীবন ছিল আদর্শময়। কেরীর আগ্রহ ছিল ইতিহাস ও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রীতি। তিনি ভ্রমণ ও অ্যাডভেঞ্চার মূলক বই পড়তে বেশী ভালবাসতেন। তাঁর জীবনে কয়েকটি উল্লেখ্যযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল তিনি কোন কাজ শুরু করলে তা অবশ্যই শেষ দেখতেন। তিনি কোন কাজকে ছোট মনে করতেন না। তাঁর দৃষ্টিতে সমস্ত কাজকে সমান মর্যাদা দিয়েছেন। তাঁর প্রমান ১৭৭৫ খ্রীঃ যখন তার বয়স ১৪ বছর তখন তিনি পজিংটনে জুতো তৈরীর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এছাড়াও ভাষা শিক্ষার প্রতি তিনি খুবই আকৃষ্ট ছিলেন তাই অল্প বয়সে তিনি ল্যাটিন, গ্রীক, হিব্রæ, ডাচ, ফরাসি ও ইংরেজি ভাষা শিখতে পেরেছিলেন। ডঃ কেরীর কর্মজীবন শুরু হয় ১৭৮৩ খ্রীঃ হতে যখন তিনি খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হন। তারপরের বছরগুলোতে অর্থাৎ ১৭৮৪-১৭৯৩ খ্রীঃ ভারতে এসেছিলেন। ভারত থেকে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে এসে এদেশের জনগনের বিভিন্ন সমস্যা অবলোকন করেছিলেন এবং সমাধানের অনেক চেষ্টাও করেছিলেন। এদেশের বিভিন্ন জেলায় তিনি মন্ডলী গঠনের বা স্থাপনের পাশাপাশি স্কুল প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সোসাইটি গঠন, ছাপাখানা স্থাপনা, সংবাদপত্র প্রচলন প্রভূতি নানা ধরনের কাজে নিযুক্ত হয়েছিলেন। এদেশে থেকে এদেশের বাংলা ভাষা শিখে ১৮০১ খ্রীঃ প্রথম বাংলা ভাষার নিয়ম কানুন সম্পর্কিত বাংলা ব্যাকরণ বই রচনা করেছিলেন। শিশুদের ধর্ম শিক্ষার জন্য সান্ডে স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ ৩৪টি ভাষার বাইবেল অনুবাদের কাজ করেছেন। এছাড়াও রচনা করেছেন বাংলা ও ইংরেজি ভাষার বিভিন্ন অভিধান। আজ তিনি আর আমাদের পাশে নেই। ১৮৩৪ খ্রীঃ ৯ই জুন তিনি আমাদের সকলকে রেখে চলে গেছেন। সেই মহান ব্যক্তির প্রতি আমরা শ্রদ্ধা প্রকাশ করি। তাঁর নাম অনুসারে অত্র স্কুলের নামকরণ করা হয়।
কেরী মেমোরিয়াল হাই স্কুলের পরিচিতি:
দিনাজপুর জেলার মাননীয় জেলা প্রশাসক এর বাস ভবনের পশ্চিমে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ক্যাম্প এর দ্বিতীয় গেট সংলগ্ন কেরী মেমোরিয়াল হাই স্কুলটি অবস্থিত। ১৭৯৯ খ্রীঃ ব্যাপ্টিষ্ট মিশনারীগণ স্কুলটি স্থাপন করেন এবং নার্সারী থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের ব্যবস্থা করেন। এলাকাবাসী ও যুগের চাহিদা মিল রেখে বর্তমানে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় পাঠদান করা হচ্ছে।
কেরী মেমোরিয়াল হাই স্কুল এর বৈশিষ্ট্যঃ
* প্রতিষ্ঠানটি শহরের বিজিবি ক্যাম্পের সামনে কোলাহলমুক্ত, ধূমপানমুক্ত, শান্ত ও মনোরম পরিবেশে অবস্থিত।
* অভিজ্ঞ পরিচালনা পরিষদ ও বিজ্ঞ উপদেষ্টা মন্ডলীদ্বারা পরিচালিত।
* সুশিক্ষিত, দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী দ্বারা পাঠ দান।
* সুপরিকল্পিত পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঠদান।
* সৃজনশীল পদ্ধতিতে ও শিক্ষা উপকরনের মাধ্যমে শিক্ষাদান।
* ইংরেজী ও গণিত বিষয়সমূহ প্রতিটি বিষয়ে গুরুত্বের সহিত শিক্ষাদান।
* মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে পাঠ দান।
* কম্পিউটার ল্যাব ও ইন্টারনেট ব্যবহার শেখানোর ব্যবস্থা।
* অন লাইনের মাধ্যমে ভর্তিসহ সমস্ত কার্যক্রম জানানো হয়।
* শিশুদের নিবিড় পরিচর্যাসহ মাতৃস্নেহে শিক্ষাদান।
* শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব ধর্মীয় শিক্ষাদান ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে উদ্ধুদ্ধকরণ।
* নিজস্ব একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ক্লাস পরিচালনা ও পরীক্ষা গ্রহণ।
* বিষয় বিত্তিক শিক্ষক দ্বারা পাঠা দান।
* নিয়মিত অভিভাবকের পরামর্শ গ্রহণ।
* হাতের লেখার প্রতি বিশেষ যত্নে নেওয়া হয়।
* নিয়মিত ডায়েরী সংরক্ষনের ব্যবস্থা।
* মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পাঠদানের সুযোগ।
* পল্লী এলাকার এতিম, দরিদ্র কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
* স্বাস্থ্য সম্মত শৌচাগার ও পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা।
প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যঃ জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে সকল জাতি-গোষ্ঠির মানুষ এবং ব্যক্তি মানুষের অখন্ড বিকাশ ও জাতীয় জীবনে মানবতা, নৈতিকতা, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ বিস্তার। পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষা ও সার্বিক মঙ্গল সাধন করার দায়িত্ব সম্বন্ধে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে সচেতন করা ও সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা।
ভর্তির পদ্ধতিঃ
নার্সারীতে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদেরকে শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়। তবে অক্ষর চেনা ও লিখতে
পারাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
শিশু থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিযোগিতামূলক লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির জন্য নির্বাচিত
করা হয়।
ভর্তির নীতিমালাঃ
* ভর্তির জন্য স্কুলের অফিস থেকে সংগৃহীত প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ফর্মে ২ কপি পাসর্পোট আকারের ছবিসহ আবেদন করতে
হবে।
*ভর্তি ফরম জমা দিয়ে নির্দিষ্ট তারিখে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হবে।
*উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদেরকে নিদিষ্ট তারিখের মধ্যে ভর্তি হতে হবে।
*নার্সারীতে ভর্তির ক্ষেত্রে সন্তানের বয়স ৪ বছর উত্তীর্ণ হতে হবে।
*ভর্তির সময় শিশুর জন্ম নিবন্ধন পত্রের ফটোকপি অফিসে জমা দিতে হবে।
*ভর্তির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
*ভর্তির সময় জানুয়ারী মাসের বেতন সহ সেশন চার্জ এবং অন্যান্য ফি (যদি থাকে) পরিশোধ করতে হবে।